নদীর পাড় আর বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে কাশফুলের জেগে ওঠার আভাসই বলে দেয় শারদীয় দুর্গোৎসব আসন্ন। বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের অপেক্ষার পালা শেষ হতে বাকি আর ১০ দিন।
দীর্ঘদিন ধরে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা আর শৈল্পিক ভাবনার মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি করছেন কারিগররা। রংতুলির আঁচড়ে দেবীকে মূর্ত করে তোলার কাজে ব্যস্ত তারা। দুর্গোৎসবের দিনক্ষণ যত ঘনিয়ে আসছে ততই শৈল্পিক কারুকার্যে অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে উঠছে একেকটি প্রতিমা।
এ বছর রংপুর মহানগরসহ আট উপজেলার ৮৩৫টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনে যাবতীয় নিরাপত্তার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে মণ্ডপ কমিটিসহ প্রশাসন। প্রত্যেকটি মণ্ডপে শৃঙ্খলা কমিটির পাশাপাশি থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এবার দুর্গোৎসবে র্যাব, পুলিশ, আনসার সদস্যদের পাশাপাশি থাকবে সেনাবাহিনীর টহল টিমের নজরদারি। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে মণ্ডপের নিরাপত্তা জোরদারে থাকবে বাড়তি ব্যবস্থা।
রংপুর নগরীর বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, দেবী দুর্গার আগমনে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য দুর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, সিংহ, হাঁস, পেঁচা, সাপসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা প্রস্তুত করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও প্রতিমা রং করার কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে শৃঙ্খলা রক্ষায় মণ্ডপে মণ্ডপে কমিটি গঠনের পাশাপাশি বৈরী আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে অনেক মণ্ডপে ত্রিপলের ছাউনির ব্যবস্থারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।হিন্দু ধর্মীয় নেতা ও পুরোহিতদের তথ্যমতে, আগামী ২ অক্টোর বুধবার ভোর থেকে দেবীর আবাহনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজার ক্ষণগণনা। মহালয়ার ছয় দিন পর শুরু হবে দেবী দুর্গার আরাধনা। সেই হিসেবে ৯ অক্টোবর দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর মহাষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। এরপর মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী শেষে ১৩ অক্টোবর বিজয়াদশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসব।
রংপুর মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, দুর্গাপূজা আসন্ন হওয়ায় প্রতিমা তৈরির কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে। একই সঙ্গে এবার বেড়েছে প্রতিমা কারিগরদের মজুরি। ভক্তরা সবকিছুকে ছাপিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, দুর্গোৎসবে মণ্ডপে মণ্ডপে বাজবে ঢাকের বোল, কাঁসার ঘণ্টা ও শাঁখের ধ্বনি। ভক্তদের আরাধনায় থাকবে অশুভ শক্তি বধের প্রার্থনা। পাঁচ দিনের এ উৎসবে বুধবার (৯ অক্টোবর) ষষ্ঠী আর পরদিন বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সপ্তমী। শুক্রবার অষ্টমী, শনিবার নবমী ও রোববার দশমীর দিন বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
এদিকে রংপুর জেলা পুলিশ ও মহানগর পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রংপুর নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডে ১৫২টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গা উৎসব উদযাপন হবে। নগরের বাইরে জেলার ৮ উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ৬৮৩টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে কোতয়ালী থানাধীন ৬৮টি, গঙ্গাচড়ায় ৯৫টি, তারাগঞ্জে ৪৭টি, বদরগঞ্জে ১২৩টি, মিঠাপুকুরে ১০৬টি, পীরগঞ্জে ১০৫টি, পীরগাছায় ৭৩টি ও কাউনিয়ায় ৬৬টি পূজামণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা হবে।শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সভাকক্ষে পূজা উদযাপন পরিষদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।সভায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন সফল করতে রংপুর জেলার সকল পূজামণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশবাহিনী কাজ করবে। এ ছাড়া প্রতিটি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সেইসঙ্গে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশের পাশাপাশি পূজা উদযাপন পরিষদের স্বেচ্ছাসেবীরা সজাগ থাকতে হবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন রংপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাজিয়া সুলতানা, রংপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাম জীবন কুন্ডু, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রশান্ত কুমার রায়, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের রংপুর মহানগরের সভাপতি সুব্রত সরকার মুকুল প্রমুখ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dinajpur TV